মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কয়েকটা দিন কাটতে না কাটতেই লকডাউন। পড়াশোনায় ছুটি পেলেও বাড়ি থেকে এক পা বাইরে ফেলাও নিষেধ। তাই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার মাধ্যম একমাত্র ভিডিও কল। দিব্যি সেভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু আচমকাই কানে এল লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার কথা। বর্বরতার কথা শোনার পর চিনা প্রযুক্তি ব্যবহারে তৈরি হল অনীহা। নিজে কিছু করে দেখানোর জেদও তৈরি হল। সেই জেদকে পুঁজি করেই ‘দৃষ্টি’ অ্যাপ (Drishti App) বানিয়ে ফেলল ঘাটালের রাধানগর গ্রামের অর্ণব মোদক নামে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। গুগল প্লে স্টোরেও (Google Play Store) পাওয়া যাচ্ছে অ্যাপটি।
ঘাটালের জলসরা রামকৃষ্ণ হাইস্কুলের ছাত্র অর্ণব বলে, “মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর কিছু একটা করার তাগিদ চেপে বসেছিল। একদিন শুনলাম ভারত-চিনের সংঘর্ষের জেরে সমস্ত চিনা অ্যাপগুলি বন্ধ করার দাবি উঠেছে। তখন ভাবলাম একটা যদি অ্যাপ বানানো যায়। তারপরই ভাবনাচিন্তা করতে থাকি। গত আড়াই মাসে দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা সময় ব্যয় করে তৈরি করে ফেলি একটি অ্যাপ। নাম দিয়েছি ‘দৃষ্টি’।
বাংলার ছেলের তৈরি ‘দৃষ্টি’ অ্যাপের বিশেষত্ব কী? অধিকাংশ ভিডিও কনফারেন্সের অ্যাপে আধ ঘন্টার বেশি কথা বলা যায় না। একসঙ্গে ১০০ জন কথা বলতে পারবেন। কিন্তু ‘দৃষ্টি’ অ্যাপে যতক্ষণ খুশি কথা বলা যায়। এই অ্যাপ সম্পূর্ণ নিরাপদ। এখান থেকে কোনও তথ্য হ্যাক হওয়ার আশঙ্কাও নেই। অর্ণব বলে, “এই অ্যাপের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন তাঁরা যাঁরা অনলাইনে পড়াশোনা করেন। এমনকি অফিস, আদালতেও এই অ্যাপ খুবই কাজে লাগবে।” মোবাইল অ্যাপের রেটিং সংস্থা ইন্টারন্যাশন্যাল এজ রেটিং কোয়ালিশন এই অ্যাপকে ৩.৫ রেটিং দিয়েছে। গুগল প্লে স্টোরেও পাওয়া যাচ্ছে অ্যাপটি।
ভবিষ্যতে সে সফটওয়ার নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় অর্ণব। তার কাজে বাধা দিতে চাননি ছাত্রের বাবা হারাধনবাবুও। তিনি বলেন, “ সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত অর্ণব ক্লাসে প্রথম হত। কিন্তু এই মোবাইল নেশায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে। আমার তো খুব ভয় হত। কিন্তু ও কথা দিয়েছে মাধ্যমিকের ফল ভাল হবে। ভবিষ্যতে ও সফটওয়্যার নিয়ে পড়তে চায়। আমরা রাজি হয়েছি । ও যা করেছে তার জন্য আমরা খুবই গর্বিত। সূত্র:সংবাদ প্রতিদিন