বিসিএস এ সবচেয়ে বেশি নম্বার পাবার সবচেয়ে ভালো বিষয় হল গনিত। একমাত্র গনিতেই অন্যান্য যে কোন বিষয়ের চেয়ে ভালো নাম্বার পাওয়া সম্ভব। তাই গনিতেই আমাদের বেশি জর দেয়া উচিৎ। প্রিলি থেকেই গনিতের মৌলিক ধারণা রাখা উচিৎ।
বিগত কয়েকদিনে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি ও বই সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। আপনাদের মেসেজের আলাদা আলাদা উত্তর দেওয়া খুবই কষ্টকর বিধায় এই গ্রুপের মাধমেই উত্তরগুলো দেওয়ার চেষ্টা করছি। মেসেজে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশি পেয়েছি সেটা হলো- আমি গণিতে দুর্বল। কিভাবে কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। একটু সাজেশন দেবেন প্লিজ। প্রথমেই গণিতে আমি কেমন ছিলাম সেটা নিয়ে কয়েকটা কথা বলছি…
এক) ক্লাস ফাইভে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছি সত্যি, কিন্তু ক্লাস সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত গণিতে পাস করা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল। স্যারদের দয়া ছাড়া পাস করতে পারিনি অনেক সময়ই। গণিত ক্লাসে প্রায়দিনই পড়া দিতে পারতাম না। একদিন স্যারের মার না খেলে বন্ধুরা বলত, কিরে আজ তো তোর খুশির দিন।এই যে দয়ার কথা বললাম, এটা বলাতে আবার মনে করবেন না যে আমি বিনয় দেখাচ্ছি। সত্যিকার অর্থেই স্যাররা আমাকে গ্রেস মার্ক দিয়ে ৩৩ বানিয়ে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ন করেছেন অনেক সময়ই। মাঝে মাঝে আমার রেজাল্ট সীটে একটি কথা লেখা থাকত- বিবেচনায় পাস।
দুই) ক্লাস এইটে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় স্যাররাও আমাকে গণিতে পাস করাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কারণ দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় আমি ম্যাথে পেয়েছিলাম একশোতে মাত্র সাত মার্ক। ফাইনাল পরীক্ষার আগে ফুটবল খেলতে গিয়ে আমার পা কেটে যায়। ভয়ে ছিলাম ফাইনাল পরীক্ষায় গণিতে এমনিতেই ফেইল করব। তাই পা কাটার কথা বলে পরীক্ষা দিতে না যাই। কিন্তু আব্বা জোর করে নিয়ে গিয়েছিলো। ফলাফল যথারীতি বিশেষ বিবেচনায় পাস।
তিন) গণিতের ভয়ে এসএসসিতে সাইন্স নিতে চাইনি। কিন্তু পরিবারের চাপাচাপিতে সাইন্স নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। সাইন্সে পড়লেও ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে উচ্চতর গণিত নিতে চাইনি। অনেকের কথা- সাইন্স পড়লে ম্যাথ না পড়ার বিকল্প নাই। ফলাফল হিসেবে এসএসসি পরীক্ষার মার্কশীটে উচ্চতর গণিতের পাশে F গ্রেড লেখা এখনও জ্বলজ্বল করছে।
চার) গণিতের ভয়ে এইচএসসিতে আর সাইন্সে পড়ব না সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু আমার সাধ্য থাক আর না থাক পরিবারের বিশেষ করে আব্বার চাপাচাপিতে সাইন্স নিতে বাধ্য হলাম। ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে আবারও উচ্চতর গণিত। পরীক্ষার আগে আঃ হামিদ স্যারের কড়া সাজেশন ও এক ভাইয়ের নিকট থেকে সেই সাজেশন সমাধান করে কোনরকম পাস মানে B গ্রেড পাইছিলাম।
পাঁচ) এবার কড়া সিদ্ধান্ত নিলাম, যে যাই বলুক আমি সাইন্সে ভর্তি পরীক্ষা দেব না। কিন্তু পরিবারের পরামর্শে অনেক ভার্সিটিতে সাইন্সের বিষয়গুলিতে পরীক্ষা দিলেও আমি লুকিয়ে লুকিয়ে যেহেতু আর্টসের প্রিপারেশন নিয়েছি, তাই আমার ভরসা ছিল বিভিন্ন ভার্সিটির D ইউনিট বা আর্টসের বিষয়গুলো। যার ফলাফল হিসেবে D ইউনিট থেকে জগন্নাথ ভার্সিটিতে দর্শনে পড়েছি।
এবার ভাবুন, আমি যেরকম দুর্বল ছিলাম, আপনি কি তার চেয়েও দুর্বল। নিশ্চয়ই না। তাহলে আমি যদি ব্যাংকার হইতে পারি, ক্যাডার হইতে পারি, আপনি কেন পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। তার জন্য দরকার আপনার ইচ্ছাশক্তি। তো এবার মুল কথায় আসি। কিভাবে আমি এই অবস্থা থেকে আজকের এই অবস্থায় ( যদিও আজকের অবস্থাও বেশি ভালো না)?
১) ভার্সিটিতে পড়ার সময় যে মেসে থাকতাম, সেখানে ম্যাথে দক্ষ ন্যাশনাল ভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সাইন্সে প্রথম শ্রেণী পাওয়া মেহেদী হাসান নামে ভাই ছিলেন। প্রথমেই তার কাছে নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে প্রতিকার চাইলাম। তিনি বলেছিলেন, ক্লাস ফাইভ থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত ম্যাথের গাইড কিনে পড়া শুরু করো। যেখানে বুঝবানা আমাকে জিজ্ঞাসা করবা। আমি সেটাই করেছিলাম।
২) ক্লাস ফাইভ থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত ম্যাথের গাইড পড়া শেষ হলে প্রিলির জন্য MP3 ম্যাথ বই কিনে পুরো বইটা একপাশ থেকে পড়ে গেলাম। যেহেতু ক্লাস ফাইভ থেকে টেন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাথই বুঝে ফেলেছিলাম, তাই এই বইটা পড়তে বেশি সময় লাগলো না।
৩) এসবের মাঝে বড় ভাইয়েরা যখন বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়ে আসতো, তাদের কাছে থেকে প্রশ্ন নিয়ে দেখতাম কয়টা ম্যাথ পারি। আগে যেখানে কিছুই পারতাম না, সেখানে এখন নিশ্চিতভাবেই আগের চেয়ে বেশি পারতাম। এভাবে চালিয়ে যেতে লাগলাম।
৪) ৩৩ তম বিসিএস প্রিলি পাস করে রিটেনের জন্য ওরাকলের ম্যাথ ও মানসিক দক্ষতা বইটা পড়লাম। এটুকু নিয়েই ৩৩ তম বিসিএসে রিটেন পাস করেছিলাম। এখন পর্যন্ত আমার মনে হয় ওরাকলের ম্যাথ ও মানসিক দক্ষতা বইটা লিখিত পরীক্ষার জন্য ভালোই।
৫) এসব নিয়ে ভালোই চলছিল। কিন্তু ৩৫ তম বিসিএসে এসে ধরা খেয়ে গেলাম। MP3 ও ওরাকলে আর কাজ হয়না। তাই ক্লাস টেনের উচ্চতর গণিত বইটাতে একটু হাত দিতে হয়েছিল। বিসিএসের সিলেবাস ধরে এখান থেকে প্রয়োজনীয় টপিকগুলো পড়েছিলাম। ৩৬ তম তে আটকা পড়ি নাই ইনশাআল্লাহ।
৬) বিন্যাস ও সমাবেশের ম্যাথ আমার মাথায় ধরত না। কোনটা বিন্যাস আর কোনটা সমাবেশ এটা নিয়ে ব্যাপক প্যাচ লাগত। বলতে দ্বিধা নাই- এই ব্যাপারটা আমি ক্লিয়ার হয়েছি খাইরুলস ব্যাসিক ম্যাথ বই থেকে। আপনাদের সমস্যা থাকলে বইটা দেখতে পারেন।
৭) যারা বিসিএসের পাশাপাশি ব্যাংকের জন্য ট্রাই করছেন, তাঁরা বাংলার পাশাপাশি ইংরেজী ভার্সনে ম্যাথ প্রাকটিস করবেন। এজন্য সাইফুরস ম্যাথ ও জাফর ইকবাল আনসারীর ব্যাংক রিটেন ম্যাথ বইগুলো দেখতে পারেন।সূত্র ডিবিসি নিউজ